মানব-ইতিহাসের প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। পাশ্চাত্য ঘরানার বিশ্ববিদ্যালয় ভারতবর্ষে ঔপনিবেশিক-আমলে প্রতিষ্ঠিত হলেও, প্রাক্-ঔপনিবেশিক আমলে এদেশে নিজস্ব ধারার বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। বিউপনিবেশিত দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে সেই বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা-ব্যবস্থাকে মূল্যায়ন করা যায়। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয়জীবনে সচেতনভাবে ঔপনিবেশিক প্রভাবগুলোকে চিহ্নিত করে সেগুলো থেকে আত্মসত্তার বিচ্ছেদায়ন প্রচেষ্টাই বিউপনিবেশায়ন। উপনিবেশের অধিবাসী হয়েও কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন আদ্যোপান্ত উপনিবেশ-বিরোধী। শিক্ষা বিষয়ক প্রবন্ধগুলোতে তিনি বিউপনিবেশিত দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত ঘটিয়ে বুদ্ধিবৃত্তি ও সুকুমার বৃত্তিচর্চার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদেরকে নিজেদের সম্পর্কে সচেতন করতে ও ঔপনিবেশিক-পশ্চাৎপদতার মোহনিদ্রা থেকে জাগাতে চেয়েছেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টির মাধ্যমে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সম্মিলিত প্রয়াসে স্বাধীন ভারতবর্ষ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে...
মো. জাবেদ ইকবাল
সহকারী অধ্যাপক
প্রকাশিত: সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ভারতবর্ষ তথা বিশ্ববাসীর জীবনে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এই মহাযুদ্ধে ভারতবর্ষ প্রত্যক্ষভাবে জড়িত না হলেও ভারতবাসীর জীবনে এই মহাযুদ্ধের প্রভাব ছিল অপরিসীম। এই মহাযুদ্ধ এবং যুদ্ধের উপজাত হিসেবে সৃষ্ট নানা ঘটনা অবলম্বনে তৎকালের সাহিত্যিকেরা রচনা করেছেন অনেকগুলো কালোত্তীর্ণ ছোটগল্প। এসব সাহিত্যিকের মধ্যে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় অন্যতম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং বিশ্বযুদ্ধের অনিবার্য প্রভাবে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ, মন্বন্তর, চোরাকারবারি, কালোবাজারি, এবং কলেরার মহামারী অবলম্বনে রচিত নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্পগুলো অনন্য। সমকালে সংঘটিত এই ঘটনাগুলো অবলম্বনে তাঁর গল্প রচিত হওয়ায় এগুলো হয়েছে সমকালের প্রতিবেদন। গল্পগুলোতে তিনি যেমন সমকালের রূপায়ণ করেছেন, তেমনি রূপায়ণ করেছেন তাঁর কালের নেতিবাচক চরিত্রের মানুষদের এবং সন্ধান করেছেন শুদ্ধসত্তার, ব্যক্ত করেছেন মানবীয়...
মো. জাবেদ ইকবাল
সহকারী অধ্যাপক
প্রকাশিত: সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫
সাহিত্যের, দর্শনের কিংবা রাষ্ট্রজ্ঞিানের শিক্ষার্থীদের কাছে একথা খুবই পরিচিত যে, দার্শনিক প্লেটো (৪২৮-৩৪৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) তাঁর পরিকল্পিত আদর্শ রাষ্ট্রের আদর্শ নাগরিকদের কাব্যের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার জন্যে কাব্য তথা কবিকে ‘না’ বলেছিলেন এবং কবিদেরকে তাঁর আদর্শ রাষ্ট্র থেকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে চেয়েছিলেন। প্লেটোর মহাপ্রয়াণের প্রায় আড়াই হাজার বছর পরে আমরা উপরিউক্ত মন্তব্যের পুনর্মূল্যায়নে ইচ্ছুক। কারণ, আমরা কিছুদিন পূর্বে দেখেছি যে, ইউরোপের একটি আদালত দার্শনিক সক্রেটিসকে ‘বেকসুর খালাস’ দিয়েছে ঐ অভিযোগ থেকে, যে অভিযোগের কারণে গ্রিসের আদালত সক্রেটিসকে হেমলক পান করিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে নির্দেশ দিয়েছিল। কাব্য তথা কবিদের সম্বন্ধে প্লেটোর দৃষ্টিভঙ্গিকে পুনর্মূল্যায়ন করতে গিয়ে প্লেটোর মন্তব্যগুলোকে আমরা যদি তন্নিষ্ঠভাবে বিশ্লেষণ করি,...
মো. জাবেদ ইকবাল
সহকারী অধ্যাপক
প্রকাশিত: সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫
জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪) রবীন্দ্রোত্তর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তাঁর ব্যক্তিমনীষা গঠিত হয়েছে প্রজ্ঞা, চিন্তা, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও ঐতিহ্যের সমন্বয়ে। কথাসাহিত্যে জীবনানন্দ দাশ অত্যন্ত আত্মমুখী। বিশ শতকে পরাক্রান্ত সা¤্রাজ্যবাদী শক্তির মোহবিস্তারকালে তিনি শতাব্দীর ক্ষত গুলোকে অত্যন্ত স্বগতভাবে উপস্থাপন করেন। জীবনানন্দ দাশের প্রবন্ধের বিষয় আড়ম্বরপূর্ণ নয় বরং দর্শনগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রবন্ধের গঠন ও ভাষ্য অতি সাধারণভাবে উপস্থাপিত। তাঁর প্রবন্ধে আত্মগত চিন্তা, বোধ ও অনুভূতির প্রকাশই অনবদ্য হয়ে উঠেছে। অযথা উপদেশবাক্য কিংবা গুরুগম্ভীর সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা লেখক করেননি। প্রবন্ধের প্রথাগত ধরন থেকে বেরিয়ে তিনি নিজস্ব ধারায় তাঁর প্রবন্ধ রচনা করেছেন। অধিকাংশ প্রবন্ধই হয়ে উঠেছে ব্যক্তি, সময় ও অভিজ্ঞতার প্রতীক। তাঁর...
নূর-ই-নুসরাত
প্রভাষক
প্রকাশিত: বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৫
জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪) ঔপনিবেশিক ইতিহাসের সময়ে জন্মগ্রহণ করেন। ব্রাহ্ম মধ্যবিত্ত শিক্ষিত পরিবারের উদারনৈতিক হৃদয়বত্তা ও রূচিময়তায় পরিশীলিত এক পরিবেশে বেড়ে ওঠেন তিনি। বিশ শতকীয় যুদ্ধবিক্ষত সময়-সংক্রান্তিতে তাঁর চৈতন্য নির্মিত। ব্যক্তিজীবনের অস্বচ্ছলতা ও প্রতিষ্ঠাহীনতা, অন্তর্মুখী স্বভাব, সমকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা তাঁকে নির্মোহ ও অন্তর্জ্ঞানী করে তোলে। কথাশিল্পী হিসেবে তিনি নিজের আত্মসমগ্রতাকেই উপস্থাপন করেন। উপন্যাসের গল্পশরীরে, মতাদর্শে, চরিত্রনির্মাণে, পরিপ্রেক্ষিত নির্মাণে ও জীবনদর্শনে সেই অন্তঃস্বর ধ্বনিত হয়। এক্ষেত্রে কবিস্বভাবী ঔপন্যাসিকের আত্মবর্ণীকরণ প্রণালীটি স্বতন্ত্র। তিনি উপন্যাসে আরোপ করেন নিজের চেতনার অনাবিষ্কৃত, তাঁর ইন্দ্রিয়সংবেদনলব্ধ বোধের স্বকীয়তা। আত্মবিমুখ সাহত্যিসৃষ্টিকে বর্জন করে তাঁর আধেয় হয়ে ওঠে সত্তার কল্পকথা। তিনি ঘটনাবহুল বহির্জগতকে রোমান্টিকতার আড়ালে তুলে ধরেননি বরং...
নূর-ই-নুসরাত
প্রভাষক
প্রকাশিত: বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৫
সেলিনা হোসেনের নীল ময়ূরের যৌবন : চর্যাভূমির সমাজতত্ত্ববাংলা সাহিত্যের মননশীল লেখক সেলিনা হোসেন (জ. ১৯৪৭)। ঐতিহ্য ও কাল সচেতন উপন্যাসের ধারায় তাঁর অবদান অসামান্য। সেই ধারায় লেখকের নীল ময়ূরের যৌবন উপন্যাসটি বাঙালির হাজার বছরের সেতুবন্ধন। অষ্টম থেকে দশম শতাব্দীর মধ্যে চর্যাপদের সময় ও সমাজকে ঘিরে উপন্যাসটি রচিত হলেও এটি বিভাগোত্তর পূর্ব পাকিস্তানের তথা বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধকে প্রতীকায়িত করে। সেলিনা হোসেন তাঁর উপন্যাসটিকে এক বৃহৎ পরিসরে বিস্তৃত করেছেন। উপন্যাসে বিধৃত সমাজ প্রতিনিধিত্ব করে সমগ্র চর্যাভূমির সমাজের। আর চর্যাভূমি হলো এই ভারতভূমি এবং চর্যাপদ থেকে বর্তমানের সময় ও সমাজের বিবর্তন। চর্যাভূমির সমাজতত্ত্ব এই চিরায়ত বাঙালি সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতিকে ধারণ...
নূর-ই-নুসরাত
প্রভাষক
প্রকাশিত: বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৫